রোজা, রোযা কিংবা সাওম ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন একটি ইবাদাত। আল্লাহর কাছে, সাওমের মূল্য অপরিসীম।
অথচ, মহা গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদাত সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জ্ঞানের স্বল্পতা আছে। আমরা অনেকেই সাওম ভঙ্গের কারণ সমূহ জানিনা, কি কি করলে সাওম ভঙ্গ হয়না তাও জানিনা। অনেকেই নামমাত্র রোজা রাখে, রোজা রেখে কি কি করা যাবেনা তা তারা জানেনা।
তবে, চিন্তা নেই আজ পুরো লেখায় আপনাদের রোজা ভঙ্গের কারনসমূহ, রোজা মাকরুহের কারণ সমূহ, যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না, কখন রোজা না রাখা জায়েজ আছে এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে কাযা ও কাফফারার বিধান রয়েছে; সবিস্তারে জানাব।
পড়তে থাকুন।
রোজা ভঙ্গের ২৮ কারণ
সাওম বা রোজা ভঙ্গের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিচে ২৮ টি কারণ উল্লেখ করা হল।
যেসব ক্ষেত্রে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়
- কানে বা নাকে ঔষধ দিলে।
- ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে বা অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে।
- কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে কন্ঠনালীতে পানি চলে গেলে।
- স্ত্রী বা নারীকে শুধু স্পর্শ প্রভৃতি করার কারণেই বীর্যপাত হয়ে গেলে।
- এমন কোনো জিনিস খেলে যা সাধারনত খাওয়ার উপযোগী নয়। যেমবঃ কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা প্রভৃতি।
- ধুমপান করলে (বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা সেবন করলে)।
- আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা হলকে পৌছালে।
- ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পানাহার করলে।
- রাত আছে মনে করে, সুবহে সাদিকের পর সেহরি করলে।
- ইফতারীর সময় হয়নি, দিন রয়ে গেছে অথচ সময় হয়ে গেছে- এই মনে করে ইফতারি করলে।
- দুপুরের পর রোজার নিয়ত করলে।
- দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি লালার (মুখের থুতুর) পরিমাণের চেয়ে বেশি হয় এবং কন্ঠনালীর নীচে চলে যায়।
- কেউ জোরপূর্বক রোজাদারের মুখে কিছু দিলে এবং তা কন্ঠনালীতে পৌছে গেলে।
- দাঁত কোন খাদ্য-টুকরা আঁটকে ছিল এবং সুবহে সাদিকের পর তা যদি পেটে চলে যায় তবে যে টুকরা ছোলা বুটের চেয়ে ছোট হলে রোজা ভেঙ্গে যায় না, তবে এরুপ করা মাকরুহ। কিন্তু,মুখ থেকে বের করার বের করার পর গিলে ফেললে, তা যত ছোটই হোক না কেন রোজা ভেঙ্গে যাবে। এবং অবশ্যই কাযা আদায় করতে হবে।
- হস্ত মৈথুন করলে যদি বীর্যপাত হয় তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- পেছাবের রাস্তায় বা স্ত্রীর যোনিতে কোন ঔষধ প্রবেশ করাল।
- পানি বা তেল দ্বারা ভিজা আঙুল যোনিতে বা পায়ুপথে প্রবেশ করালে।
- যোনিতে শুকনো আঙুল প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের করে আবার প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে, যদি শুকনো আঙুল একবার প্রবেশ করিয় একবারেই পুরোটা বের করে নেয়- আবার না প্রবেশ করায় তাহলে রোজার অসুবিধা হয় না।
- মুখে পানি রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- নস্যি গ্রহণ করলে বা কানে তেল ঢাললে।
- কেউ রোজার নিয়তই যদি না করে তাহলেও শুধু কাযা ওয়াজিব হয়।
- স্ত্রীর বেহুঁশ থাকা অবস্থায় কিংবা বেঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা অবস্থায় তার সাথে সহবাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এক্ষেত্রে ঐ স্ত্রীরও রোজা ভেঙ্গে যাবে, তবে তার শুধু কাযা আদায় করলেই হবে, কাফফারা দিতে হবেনা।
- রমজান ব্যতিত অন্য কোনো নফল রোজা ভঙ্গ হলে শুধু মাত্র কাযা ওয়াজিব হয়।
- এক দেশে রোজা শুর করার পর অন্য দেশে চলে গেলে সেখানে যদি নিজের দেশের তুলনায় আগে ঈদ হয়ে যায়, তাহলে নিজের দেশের হিসাবে বাকি থাকা রোজা আদায় করতে হবে। আর যদি উল্টাটা হয়, অর্থাৎ, গিয়ে রোজা এক দুটো বেড়ে যায় তাহলে তা রাখতে হবে।
যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা ও কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হয়ে যায়
- রোজার নিয়তের পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে।
- রোজার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে, স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই রোজা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যায়। উল্লেখ্য, স্ত্রী যোনীর মধ্যে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করালেই কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়ে যাবে, চাই বীর্যপাত হোক না হোক।
- রোজার নিয়ত করার পর(হারাম সত্ত্বেও) যদি পুরুষ তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর পায়ুপথে প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ ভিতরে প্রবেশ করে (চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক), তাহলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা ও কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
- কোনো অবস্থায় কোনো বৈধ কাজ যেমন স্ত্রীকে চুম্বন দিল কিংবা মাথায় তেল দিল তা সত্ত্বেও সে মনে করল যে, রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতঃপর এটা ভেবে রোজা ভেঙ্গে ফেলল, সেক্ষেত্রেও তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। এবং কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
রোজা মাকরুহ হওয়ার ১৪ টি কারণ
বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য রোজা ভাঙ্গে না তবে মাকরুহ হয়ে যায়। বাংলায় যাকে আমরা বলি রোজা হালকা হয়ে যাওয়া।
চলুন সেসব কারণসমূহ জেনে নেওয়া যাক যেসব কারণে রোজা মাকরুহ তথা হালকা হয়ে যায়।
- বিনা প্রয়োজনে কোন জিনিস চিবানো।
- তরকারী ইত্যাদির লবণ চোখে ফেলা দেয়া। তবে, কোন চাকরের মুনিব বা কোন নারীর স্বামী বদ মেজাজী হলে জিহবার অগ্রভাগ দিয়ে লবণ চেখে তা ফেলে দিলে এতটুকুর অবকাশ রয়েছে
- কোন ধরনের মাজন, কয়লা, গুল বা টুথপেস্ট ব্যবহার করা মাকরুহ। আর এর কোন কিছু সামান্য পরিমানও গলার মধ্যে চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- গোসল ফরজ অবস্থায় (সহবাসের পর যে গোসল) সারা দিন অতিবাহিত করলে রোজা হালকা হয়ে যাবে।
- কোন রোগীর জন্য নিজের রক্ত দান করলে।
- গীবত করা, চোগলখুরী করা, অনর্থক কথাবার্তা বলা, মিথ্যা বলা রোজা মাকরুহের কারন।
- ঝগড়া ফ্যাসাদ করা, গালি-গালাজ করা।
- ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করা।
- মুখে অধিক পরিমান থুথু একত্র করে গিলে ফেলা।
- দাঁতে ছোলা বুটের চেয়ে ছোট কোন বস্তু আটকে থাকলে তা বের করে মুখের ভিতর থাকা অবস্থায় গিলে ফেলা।
- নিজের উপর নিয়ন্ত্রন থাকবে না- এরুপ মনে হওয়া সত্তেও নিজের স্ত্রীকে চুমু দেয়া ও আলিঙ্গন করা। নিজের উপর নিয়ন্ত্রনের আস্থা থাকলে ক্ষতি নেই, তবে যুবকদের এহেন অবস্থা থেকে দুরে থাকাই শ্রেয়। আর রোজা অবস্থায় স্ত্রীর ঠোট মুখে নেয়া দুইক্ষেত্রেই মাকরুহ
- নিজের মুখে চিবিয়ে কোন বস্তু শিশুর মুখে দেয়া। তবে, অনন্যোপায় অবস্থা এরুপ করলে অসুবিধা নেই।
- পায়খানার রাস্তা পানি দ্বারা এত বেশি ধৌত করা যে, ভিতরে পানি পৌঁছে যাওয়ার সন্দেহ হয়-এরুপ করা মাকরুহ। আর প্রকৃত পক্ষে পানি পৌছে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই এ ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। এ জন্য রোজা অবস্থায় পানি দ্বারা ধৌত করার পর, কোন কাপড় দ্বারা বা হাত দ্বারা পানি পরিস্কার করে ফেলা নিয়ম।
- ঠোটে লিপষ্টিক লাগালে যদি মুখের ভিতর চলে যাওয়ার আশংকা হয় তাহলে তা মাকরুহ।
নারীর বা মেয়েদের রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো কি কি?
পুরুষের যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়, একজন নারীরও সেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এই যে, নারীরা ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের দিনগুলিতে রোজা রাখতে পারেনা।
কেননা,সে সমস্ত দিনে তারা অপবিত্র থাকে।
আধুনিক বিজ্ঞানে, ঔষধের মাধ্যমে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব সাময়িক বন্ধ রাখা যায়। তবে, প্রকৃতির নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো অনুচিত। তবে, তর্কসাপেক্ষ এটা সম্মত এবং বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে এমনটা করলে ক্ষতি নেই।
“রোজা অবস্থায় রজঃস্রাব হলে ওই দিনের রোজা হবে না। তবে, রমজানের সম্মানে সেদিন ইফতার পর্যন্ত তার পানাহার থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।”
যেসব কারনে রোজা ভেঙ্গে ফেলা যাবে (তবে কাযা আদায় করতে হবে)
কিছু কারন ও বিশেষ অবস্থা রয়েছে যখন রোজা ছেড়ে দেয়া যাবে। এসব ক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়া রোজার কাযা করে নিতে হবে।
কারণ গুলো এই যে-
- যদি এমন পিপাসা বা ক্ষুধা লাগে যাতে প্রাণের আশংকা দেখা দেয়।
- যদি এমন কোন রোগ বা অবস্থা দেখা দেয় যে, ঔষধ-পত্র গ্রহণ না করলে জীবনের আশা ত্যাগ করতে হয়।
- গর্ভবতী স্ত্রীলোকের যদি এমন অবস্থা হয় যে, নিজের বা সন্তানের প্রাণ নাশের আশংকা হয়।
- বেহুঁশ বা পাগল হয়ে গেলে।
তবে মনে রাখতে হবে– কেউ যদি অন্যকে দিয়ে কাজ করাতে পারে বা জীবিকা অর্জনের জন্য অন্য কোন কাজ করতে পারে তা সত্ত্বেও সে টাকার লোভে রোদে গিয়ে কাজ করল এবং এ কারণে পিপাসায় আক্রান্ত হল, তাহলে তার জন্যে রোজা ছাড়ার অনুমতি নেই।
যেসব কারণে রোজা না রাখার অনুমতি আছে
- যদি কেউ শরী’য়াত সম্মত সফরে থাকে তাহলে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে; অবশ্যই পরে তার কাযা করে নিতে হবে এই শর্তে। কিন্তু, সফরে যদি কষ্ট না হয়, তাহলে রোজা রাখাই উত্তম। আর যদি কোনো ব্যক্তি রোজা রাখার নিয়ত করার পর সফর শুরু করে তাহলে তার রোজা রাখতে হবে।
- কোন রোগী ব্যক্তি রোজা রাখলে যদি তার রোগ বেড়ে যাবার আশংকা হয় অথবা কোন নতুন রোগ দেখা দেয়ার আশংকা তৈরি হয় তাহলে রোজা ছেড়ে দেয়ার অবকাশ রয়েছে। তবে, অবশ্যই সুস্থ হবার কাযা আদায় করে নিতে হবে। তবে, অসুস্থ অবস্থায় রোজা ছাড়তে হলে কোন দ্বীনদার পরহেযগার চিকিৎসকের পরামর্শ থাকা শর্ত, কিংব নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে হতে হবে, নতুবা শুধু নিজের কাল্পনিক খেয়ালের বশবর্তী হয়ে আশংকাবোধ করে রোজা ছাড়া দুরস্ত হবে। এমনটা হলে অবশ্যই রোজার কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হবে।
- রোগ মুক্তির পর যে দূর্বলতা থাকে তখন রোজা রাখলে যদি পুনরায় রোগাক্তান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা হয় তাহলে তখন রোজা না রাখার অনুমতি আছে। অবশ্যই সুস্থ হওয়ার তার কাযা আদায় করতে হবে।
- গর্ভবতি বা দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীলোক রোজা রাখলে যদি পুনরায় রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা হয় বা রোজা রাখলে বুকের দুধ শুকিয়ে যাবে আর সন্তান সমূহের কষ্ট হবে – এরুপ নিশ্চিত হলে তার জন্য তখন রোজা না রাখা জায়েজ, পরে কাযা আদায় করতে হবে।
- হায়েয নেফাস অবস্থায় রোজা ছেড়ে দিতে হবে এবং পবিত্র হওয়ার পর কাযা আদায় করে নিতে হবে।
যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
- মেসওয়াক করা। যে কোন সময়, হোক কাঁচা বা শুষ্ক।
- শরীর বা মাথ বা দাড়ি গোঁপে তেল লাগানো।
- চোখে সুরমা লাগানো বা কোন ঔষধ লাগানো।
- খুশবু লাগানো বা তার ঘ্রান নেয়া।
- ভুলে কিছু পান করা বা আহার করা বা স্ত্রী সম্ভোগ করা।
- অজ্ঞাত বশতঃ গরম বা পিপাসার কারণে গোসল করা বা বারবার কুলি করা।
- অনিচ্ছাবশতঃ গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
- কানে পানি দেয়া বা অনিচ্ছাবশতঃ চলে যাওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দিলে সতর্কতা হল যে রোজা কাযা করে নেওয়া।
- অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হওয়া। ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি করলে মাকরুহ বা রোজা হালকা হয়না, তবে এরুপ করা ঠিক নয়।
- স্বপ্ন দোষ হওয়া।
- মুখে থুথু আসলে গিলে ফেলা।
- যে কোন ধরনের ইনজেকশন বা টিকা লাগানো। তবে, রোজার কষ্ট যেন বোধ না হয়- এ উদ্দেশ্যে শক্তির ইনজেকশন বা স্যালাইন লাগানো মাকরুহ।
- রোজা অবস্থায় দাঁত তুলে ফেললে এবং রক্ত পেটে না গেলে।
- পাইরিয়া রোগের কারণে যে সামান্য রক্ত সব সময় বের হতে থাকে এবং গলার মধ্যে যায় তার কারণে।
- কোনো কিছু দংশন করলে। (উদাহরণস্বরুপ সাপ, কুকুর)
- পান খাওয়ার পর ভালভাবে কুলি করা সত্তেও যদি থুথুতে লালাভাব থেকে যায়।
- শাহওয়াতের সাথে শুধু নজর করার কারণেই যদি বীর্যপাত ঘটে যায় তাহলে রোজা ফাসেদ হয়না।
- রোজা অবস্থায় শরীর থেকে ইনজেকশনএর সাহায্যে রক্ত বের করলে রোজা ভাঙ্গে না এবং এতে রোজা রাখার মত শক্তি চলে যাওয়ার মত দূর্বল হয়ে পড়ার আশংকা না থাকলে মাকরুহও হয়না।
- কোনো ধরনের ইঞ্জেকশন-ইনসুলিন বা টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হয় না, এমনকি গ্লুকোজ ইঞ্জেকশানের দ্বারাও রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। -ফাতাওয়া উসমানি : ২/১৮৬
রোজা রেখে কি কি করা যাবে না?
রোজা রেখে যে ৯ টি কাজ করবেন না-
- দিনের বেলায় রোজা থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই স্ত্রী সম্ভোগ করা যাবেনা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে পান করা যাবেনা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা যাবেনা।
- হস্তমৈথুন করা যাবেনা। এতে রোজা ভঙ্গ হবে।
- ধূমপান বা মদ্যপান করা যাবে না নতুবা রোজা হবে না।
- বেগানা মেয়েদের দিকে তাকানো। অনেকে নাটক-সিনেমা দেখে রোজার সময়টুকু পার করে ফেলেন, তাদের রোজা হালকা হয়ে যায়।
- মিথ্যা, গীবত, পরনিন্দা, অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া থেকে রিবত থাকা। এ বিষয়ক একটি হাদিস রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যাচার ও মন্দ কাজ ত্যাগ করেনি তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” -সহিহ বুখারি: ১/২৫৫, হাদিস- ১৯০৩
- “কানের হেফাজত। যেমন- গান শোনা, গীবত, পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা শোনা থেকে বিরত থাকা।”
- সেহরি ও ইফতারে হারাম আহার পরিহার করা। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন, “যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রেখে হারাম খাবার দ্বারা ইফতার করে সে যেন একটি অট্টালিকা নির্মাণ করে আর একটি শহর ধ্বংস করে।”
শেষ কথা
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ বা রোজা রেখে কি কি করা যাবে না এসম্পর্কে আমরা অনেকেই পূর্ন ওয়াকিবহাল থাকি না। ফলে, মনের অজান্তেই অনেক ভুল করে ফেলি।
আবার যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না, সেগুলো জানার অজ্ঞতার কারণে রোজা ভেঙ্গে ফেলি।
আশা করি, ভবিষ্যতে এই লেখা রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা দিয়ে আপনাকে সহায়তা করবে।
আপনি যদি, এই লেখা থেকে নতুন কিছু জানতে পারেন তাহলে, বিডিটেলিগ্রাফের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন।
বারবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ
রক্ত বের হলে কি রোজা ভাঙ্গে?
রক্ত বের হলেই রোজা ভাঙ্গে না বরং রোজা মাকরুহ তথা হালকা হয়ে যায়।
মজি বের হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়?
হ্যা, মজি বের হলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
ভুলে পানি খেলে রোজা ভাঙ্গে?
না, ভুল করে পানি খেলে রোজা ভাঙ্গে না।
সহবাস করলে কি রোজা হয়?
না। রোজা রেখে দিনের বেলা সহবাস করলে রোজা হয়না। তবে, রাতের বেলা সহবাসে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
সিগারেট খেলে কি রোজা ভাঙ্গে?
হ্যা, সিগারেট বা যেকোনো নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি সেবন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
1 thought on “রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ (কেন মাকরুহ হয়?)”