পবিত্র জুমা’র ফজিলত ও ১৮ টি করণীয়

সপ্তাহের সাতটি দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমা’র দিন। জমা’র দিনটিকে গবিবের হজের দিনও বলা হয়। প্রতি শুক্রবার জুমুয়া’র এই দিনটি মহান আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। জুময়া’র গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, পবিত্র কুরআনে ‘জুময়া’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুময়া’, আয়াত ০৯)। রাসুল সা. একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)।


এক হাদিসে নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুময়া’র দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে আ. সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৮৫৪)। এই দিনে একজন মুমিন-মুসলমান চাইলে নিজের আমলী জিন্দেগীকে আরও বেশি মজবুত করতে পারেন।

আমরা অত্র আলোচনায় পবিত্র জুময়া’র দিনের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে জেনে নিব, বি মাশিয়াতিল্লাহ-বি ফাদলিল্লাহ।

শুরু করা যাক।

পবিত্র জুমা’র দিনের ফজিলত

কুরবানী করার সমান সওয়াব অর্জিত হয়। এ দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু কুরবানী করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত বুখারি শরিফের এক হাদীসে রাসুল সা. বলেছেন, “যে ব্যাক্তি জুময়া’র দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল।

আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারী : ৮৮১) খ. দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়। জুময়া’র দিনের আদব যারা রক্ষা করে তাদের দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সা. মুসলিম শরিফের হাদিসের মধ্যে বলেছেন ‘যে ব্যাক্তি ভালোভাবে পবিত্র হল অতঃপর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সাথে আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুৎবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল সে যেন অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিম: ৮৫৭) গ. প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব অর্জিত হয়।

যে ব্যাক্তি আদব রক্ষা করে জুম’আর সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব লিখা হয়। আউস বিন আউস আস সাকাফী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “জুময়া’র দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদ : ৬৯৫৪, ১৬২১৮) ঘ. দুই জুময়া’র মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা। জুময়া’র সালাত জুময়া’ আদায়কারীদের জন্য দুই জুময়া’র মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, এক জুময়া’ থেকে পরবর্তী জুময়া’, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সকল (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।” (মুসলিম : ২৩৩)

পবিত্র জুমা’র দিনে করনীয়

  • জুম’আর দিন গোসল করা। বুখারী শরীফে এসেছে মহানবি স. বলেন, ‘যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন।’ এছাড়াও পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
  • জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা।
  • মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহ : ১০৯৮, বুখারী : ৮৮৭)
  • গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারী : ৮৮৩)
  • উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহ : ১০৯৭)
  • মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযী : ৫০৯,)
  • মনোযোগসহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা-এটা ওয়াজিব। (বুখারী : ৯৩৪, মুসলিম : ৮৫৭)
  • আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিম : ৮৫০)
  • পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদ : ৩৪৫)
  • সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিম : ৮৭৭, ৮৭৮)
  • জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদ : ১০৪৭)
  • এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা। (বুখারী : ৯৩৫)
  • মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারী : ৯১০, ৮৮৩)
  • কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ি : ৭১৪, বুখারি : ৯৩৪)
  • মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
  • ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদ : ১১১৪)
  • কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারী : ৫১০)
  • হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
পবিত্র জুমা’র দিনে করনীয় ও ফজিলত
পবিত্র জুমা’র দিনে করনীয়

আপনার উদ্দেশ্যে

পুরো লেখাতে আমি আপনাদের দেখাতে চেয়েছি, জুমার দিনের গুরুত্ব কতটুকু, জুমা’র দিনের ফজিলত ও কি কি করনীয়। আশা করি, সপ্তাহের সেরা এই বরকতময় দিনটির ফজিলতসমূহ উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং উল্লিখিত ১৮ টি করনীয় যথার্থভাবে অনুসরন করে, দিনটিকে আপনার নাজাতের ওয়াসিলা বানাবেন।

পুরো লেখার ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দেখবেন এবং আমি যদি কোনো কিছু মিস করে থাকি কমেন্ট করে তা জানাবেন যাতে আমাদের জ্ঞান ভাগাভাগি করে নিতে পারি।

জাযাকাল্লাহু খায়রান।

লেখক : বিলাল মাহিনী
প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা,
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক : সিংগাড়ী আঞ্চলিক গণগ্রন্থাগার ও ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, অভয়নগর, যশোর।
আজীবন সদস্য : নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট।

Leave a Comment