রোজার কাযা, কাফফারা ও ফেদিয়া বিষয়ক যা কিছু জানা প্রয়োজন

প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে। আবার, ক্ষেত্রে বিশেষে রোজা ভেঙ্গে ফেলা জায়েজও আছে।

প্রেক্ষাপট ভেদে এসব অবস্থায় রোজার কাযা আদায় করতে হয়, কখনও বা কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয়।

গুরুতর অবস্থায় কাযা ও কাফফারার কোনোটাই আদায় করতে অক্ষম হলে, তখন রোজার ক্ষতিপূরন বা ফেদিয়া দিতে হয়।

আজ পুরো লেখায় রোজার কাযা, কাফ্ফারা ও ফেদিয়া এবং কাযা ও কাফফারা আদায় করার নিয়ম সম্পর্কে সবিস্তারে জানাব।

রমজানের রোজার কাযা আদায়ের নিয়ম (মাসআলা)

  1. রমজানের রোজা কাযা গেলে রমজানের পর যথাশীঘ্র কাযা করে নিতে হবে। বিনা কারণে কাযা রোজা রাখতে দেরী করা গুনাহ।
  2. কাযা রোযার জন্যে সুবহে সাদিকের পূর্বেই নিয়ত করতে হবে, অন্যথায় কাযা রোযা সহীহ হবে না। সুবহে সাদিকের পর নিয়ত করলে সে রোযা নফল হয়ে যাবে।
  3. ঘটনাক্রমে একাধিক রমযানের কাযা রোযা একত্রিত হয়ে গেলে নির্দিষ্ট করে একত্রিত করতে হবে যে, আজ অমুক বৎসরের রমযানের কাযা রোযা আদায় করছি।
  4. যে কয়টি রোযা কাযা হয়েছে তা একসাথে একাধারে রাখা মোস্তাহাব। উল্লেখ্য, আলাদা আলাদা সময়ে রাখা দুরস্ত আছে।

কাজা শেষ করার পূর্বেই নতুন রমজান চলে আসতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে কি করবেন? এমনটা হলে, কাযা রোযার রমযানের রোযার জন্য স্থগিত রাখতে হবে; রমযানের শেষে অসম্পন্ন থাকা রোযা অবিরত রাখতে হবে। নিষিদ্ধ দিন বা  হায়েয, নেফাসের দিন এসে গেলেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

রোযার কাফ্ফারা আদায়ের নিয়ম (মাসায়েল)

  • একটি রোযার কাফ্ফারা ৬০ টি রোযা ( একটি কাযার বাইরেও)। এই ৬০ টি রোযা একাধারে রাখতে হবে। মাঝখানে ছটে গেলে আবার পুনরায় ৬০ টি রোযা একাধারে রাখতে হবে। এই ৬০ টি দিনের মধ্যে নেফাস বা রমযান মাস এসে যাওয়ার বিরতি হলে কিন্তু কাফ্ফারা আদায় হবেনা।
  • কাফ্ফারা রোযা এমন দিন থেকে শুরু করবে যেন মাঝখানে কোন নিষিদ্ধ দিন এসে না যায়। উল্লেখ্য, যে পাঁচ দিন রোযা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম তা হল দুই ঈদের দিন এবং ঈদুল আযহার পরের তিন দিন।
  • কাফ্ফারার রোযা রাখার মধ্যে হায়েযের দিন (নেফাস নয়) এসে গেলেও কোন যে কয়দিন হায়েযের কারণে বিরতি যাবে তাতে অসুবিধা নেই।
  • কাযা রোযার ন্যায় কাফ্ফারার রোযার নিয়তও সুবহে সাদিকের পূর্বে হওয়া জরুরী।
  • একই রমযানের একাধিক রোযা ছুটে গেলেও ১টি  কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। তবে, যে কয়টি রোযা ছুটবে তার প্রতিটারই কিন্তু কাযা আদায় করতে হবে।

কাফ্ফার আদায় না করতে পারলে কি করব?

কাফ্ফারা বাবত বিরতিহীনভাবে ৬০ দিন রোযা না রাখতে সমর্থ হলে নিয়ম হলো, পূর্ন খোরাকে খেতে পারে এমন সুস্থ সবল ৬০ জন মিসকীনকে (অথবা ১ জনকে ৬০ দিন) দু’বেলা পরিতৃপ্তির সাথে খাওয়াতে হবে।

অথবা, সদকায়ে ফিতর‍্-য়ে যে পরিমাণ গম বা তার মূল্য দেয়া হয় প্রত্যেককে সে পরিমাণ দিতে হবে। এই গম ইত্যাদিতে বা মূল্য দেয়ার  ক্ষেত্রে ১ জনকে ৬০ দিনেরটা একসাথে ১ দিনেই দিয়ে দিলে কাফ্ফারা আদায় হবেনা, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র একদিনের কাফ্ফারা আদায় হবে।*

“তবে, ৬০ দিন খাওয়ানোর বা মূল্য দেয়ার ক্ষেত্রে মাঝে দু’য়েক দিন বিরতি পড়লে সমস্যা হবেনা।”

রোজার ফেদিয়া কি? (এবং কিভাবে আদায় করতে হয়)

ফেদিয়া শব্দের অর্থ হল “ক্ষতিপূরন’। রোজার ফেদিয়া হল রোজার ক্ষতিপূরন। কোনো কারনে রোজা ভঙ্গ করার পর কাযা, বা কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে সমর্থ না হলে রোজার ক্ষতিপুরন দেয়াকে রোজার ফেদিয়া বলে।

রোজার ফেদিয়া আদায়ের নিয়ম

  • প্রতিটা কাযা রোজার পরিবর্তে সাদকায়ে ফিতর (ফিতরা পরিমাণ পণ্য বা তার মূল্য দান করাই হল এক রোজার ফেদিয়া।
  • মৃত ব্যক্তির রোযার কাফফারার বিধান হলো, যার যিম্মাই রোজা কাজা রয়ে গেছে- জীবদ্দশায় আদায় হয়নি, মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশহণ তার রোজার ফেদিয়া আদায় করবে। মৃত ব্যক্তি ওয়াছিয়াত করে গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে নিয়ম অনুযায়ী ওই ফেদিয়া আদায় করতে হবে। আর ওয়াছিয়াত না করে থাকলেও যদি ওয়ারিশগণ নিজদের মাল থেকে ফেদিয়া আদায় করে দেয় তবুও আশা করা যায় আল্লাহ তা কবূল করবেন এবং মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন।
  • অতি বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা রোজা রাখতে না পারলে অথবা কোন ধ্বংসকারী বা দীর্ঘমেয়াদী দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে ও সুস্থ হওয়ার কোনো আশা না থাকলে এবং রোজা রাখলে ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকলে এমন লোকের জন্য প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ফেদিয়া আদায় করার অনুমতি আছে। 

অবশ্য, এমন রোগী যদি পুনরায় শক্তি ফিরে পায় বা সুস্থ হয়ে ওঠে তবে, কাযা আদায় করতে হবে এবং যে ফেদিয়া আদায় করেছিল সে ছওয়াবও পাবে।

উপসংহার

ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের  মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ইবাদাত রোজা, যা কোনোভাবেই ছাড়া উচিত নয়।

তবে, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, এমন কিছু ইসলাম চাপিয়ে দেয় না যা সম্ভব না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম দয়ালু।

তাই জীবনের বন্ধুর বিভিন্ন পথে নানান কারণে, সুখে-অসুখে রোজা ভঙ্গ হতে পারে। বিধান অনুযায়ী সেই রোজার কাযা ও কাফফারা আদায় করতে হয়। পুরো লেখায় আমি তুলে ধরেছি কিভাবে ভঙ্গ হওয়া রোজার কাযা ও কাফফারা আদায় করতে হয়। সেই সাথে আমি আরও জানিয়েছি নিতান্তই কাযা ও কাফফারা আদায় করতে অসমর্থ হলে কিভাবে রোজার ফেদিয়া আদায় করতে হয়।

ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর পূর্বক আশা করি লেখাটির মাধ্যমে আপনাকে উপকার করতে পেরেছি।

যদি তাই হয়, আপনার কাছে অনুরোধ, বিডিটেলিগ্রাফের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমাদের পাশে থাকবেন।

জাযাকাল্লাহু খাইরন।

কাযা রোজা কখন রাখতে হয়?

রমজানের কাযা রোজা পরবর্তী রমজান প্রতীয়মান হওয়ার পূর্বেই আদায় করতে হয়। কাযা রোজার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা ফরজ নয়।

1 thought on “রোজার কাযা, কাফফারা ও ফেদিয়া বিষয়ক যা কিছু জানা প্রয়োজন”

Leave a Comment