সপ্তম শতাব্দী হতে বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রসারের সমান্তরালে ইসলামী শিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটে যা এশিয়া,আফ্রিকা ও ইউরোপের তৎকালীন শিল্প-সংস্কৃতি ও স্থাপত্যে ব্যাতিক্রমীধারণা জন্ম নেয়।
শিক্ষা, সংস্কৃতি আর অগ্রগতিতে মুসলিম বিশ্ব তখন স্বর্ণযুগ অতিক্রম করছিল।
ইসলামের স্বর্ণযুগে শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ মুসলিম শাসিত সাম্রাজ্যগুলোর মৌলিক কার্যতালিকার অন্তর্ভূক্ত ছিল।
মুসলমানদের দ্বারা স্থাপিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়,মাদ্রাসা ও গ্রন্থাগার বিশ্বসভ্যতায় জ্ঞানচর্চা ও শিল্প-সংস্কৃতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
মধ্যযুগের ইসলামী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সারা বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিলো যা আজও নিদর্শন হিসেবে সমুজ্জ্বল।
আপনি হয়ত নাও জানতে পারেন যে, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হল, আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে মরক্কের ফেজে স্থাপিত হয়। শুনে তাজ্জব হয়ে যাবেন, পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একজন মুসলিম নারী প্রতিষ্ঠা করেন। তিউনেসিয়ায় জন্মলাভকারী মহিয়সী সেই মুসলীম নারীর নাম ফাতিমা আল ফিহরি।
এসব ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষালাভ করেছেন অগণিত খ্যাতিমান মনীষী যারা বিশ্বব্যাপী ইসলামী শিক্ষা,সংস্কৃতি ও শিল্প প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন । ঐতিহাসিক এসব ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পের অনুকরণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে বড় অনেক শিক্ষপ্রতিষ্ঠান ও নান্দনিক স্থাপত্য যা বিশ্বসভ্যতা বিকাশে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে।
ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানার্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেসব বিশ্বের সেরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা কিংবা ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেয়ায় এই লেখনীর মূল উদ্দেশ্য।
কালের পরিক্রমা জুড়ে সেরা ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ-
- আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়, মরক্কো
- ইউনিভার্সিটি অব সারায়েভো, বসনিয়া
- ইউনিভার্সিটি অব খার্তুম , সুদান
- কাতার ফ্যাকাল্টি অব ইসলামিক স্টাডিজ, কাতার
- ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি,মালয়েশিয়া
- ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ,বাংলাদেশ
- উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
- উম্মুল বেগ মাদ্রাসা, উজবেকিস্তান
- আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর
- আল-মুস্তানসিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইরাক
- আল-হাকাম লাইব্রেরি, স্পেন
- দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত
আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়,মরক্কো
মরক্কোর ফেজ শহরে অবস্থিত আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় ইউনেস্কো ও ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি অনুযায়ী বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। বিদুষী নারী ফাতিমা আল-ফিহরি ৮৫৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ইসলামের স্বর্ণযুগে স্থাপিত হয়েছিল।
১৩৪৯ সালে এখানে এক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৩ সালে একে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা হয়। এখানে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি আধুনিক সকল বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে । দার্শনিক ইবনে খালদুন,ভূগোলবিদ আল-ইদ্রিসি,ইহুদি পন্ডিত মাইমোনাইডস,পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার প্রমূখ পন্ডিত এখানে পড়াশোনা করেছেন।
কুফিক ক্যালিগ্রাফির নান্দনিক কারুকার্যসমৃদ্ধ আল-কারাউইনের স্থাপত্য নকশা আন্দালুসীয় মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন ।
ইউনিভার্সিটি অব সারায়েভো, বসনিয়া
বসনিয়া-হার্জেগোভিনার রাজধানীতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব সারায়েভো গোটা যুগোস্লাভিয়া অঞ্চলের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫৩৭ সালে অটোমান শাসক গাজী হুসরেভ বেগ নিজ নামে মাদ্রাসা হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন । এখানে ছিলো একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় আমলে একে সার্বজনীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়।
১৯৪৯ সালে এটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে।সারায়েভো বিশ্ববিদ্যালয় বলকান অঞ্চলের বৃহত্তম এবং অন্যতম মর্যাদাশীল বিশ্ববিদ্যালয়। ছয়টি অ্যাকাডেমিক গ্রুপ,২০ টি অনুষদ ও ৩ টি ধর্মতাত্বিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটি গ্রাজুয়েট ও উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করে ।
ইউনিভার্সিটি অব খার্তুম, সুদান
ইউনিভার্সিটি অব খার্তুম সুদানের প্রাচীন ও বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এটি আফ্রিকার একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চমানের অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। ১৯০২ সালে গর্ডন মেমোরিয়াল কলেজ হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৫৬ সালে একে পূর্নাজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়। ৬ টি ক্যাম্পাসে বিস্তৃত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বেশ কয়েকটি ইনস্টিটিউট, ২৩ টি অনুষদ,পিএইচডি গবেশনা কেন্দ্র,আরবি ভাষা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ন্যানো প্রযুক্তি গবেষনা কেন্দ্র ও নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সাব-সাহারা অঞ্চলের অন্যতম সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার।
কাতার ফ্যাকাল্টি অব ইসলামিক স্টাডিজ, কাতার
কাতার ফ্যাকাল্টি অব ইসলামিক স্টাডিজ আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় নির্মীত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র। রাজধানী দোহায় এডুকেশন সিটির অংশ হিসেবে ২০০৮-১৫ সালে এটি বির্মাণ করা হয়।
ইসলামের কুল্লিয়াহ বা সর্বজ্ঞানকেন্দ্র ধারণা পুঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। ভবনকাঠামোয় জ্ঞান ও বিশ্বাস এর আন্তঃসম্পর্ক এবং আলোর দিকে অভিযাত্রার বিষয়টিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিস্তৃত আবাসিক ও চিত্তবিনোদন সুবিধাসহকারে কাতার ফাউন্ডেশনের এই শিক্ষাকেন্দ্রে বাল্যশিক্ষা থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। সমকালীন ইসলামী শিক্ষা, শিল্প ও স্থাপত্যের বিকাশ কাতারকে আধুনিক বিশ্বে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি,মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামী গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম।
১৯৮২ সালে ওআইসির এক সেমিনারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ইসলামী শিক্ষার একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ধারণা উপস্থাপন করেন এরই ভিত্তিতে ১৯৮৩ সালে মালয়েশিয়ার সেলাংগরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
দেশব্যাপী ছয়টি ক্যাম্পাসে ইসলামিক সায়েন্স, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ ১৪ টি অনুষদে এর শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়। জ্ঞানের ইসলামীকরণ ও আধুনিকায়নের বিস্তৃত লক্ষ্য ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শ্রেষ্ঠত্বের পথে এগিয়ে চলছে। ওআইসি এবং আটটি দেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টি স্পন্সর করে।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) বাংলাদেশের গাজীপুরে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় , যা ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)’র সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর নামেও পরিচিত।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে ওআইসি রাষ্ট্রগুলোর প্রকৌশল ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের গাজীপুরে এটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৮৮ সালে এটি যাত্রা শুরু করে এবং ২০০১ সালে একে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। মুসলিম বিশ্বের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিবিদ্যায় উৎকর্ষ সাধনে পাঠদান করে যাচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত উম্মুল কুরা আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪৯ সালে ইসলামিক শরী’আহ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যাপীঠ ১৯৮১ সালে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি বর্তমানে এখানে তথ্যপ্রযুক্তি, চিকিৎসা ও ব্যবসায় শিক্ষাসহ সময়োপযোগী পাঠদান করা হয়। যুগোপযোগী ইসলামিক বিশেষজ্ঞ তৈরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন ধারা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও অন্যান্য স্থাপনা দৃষ্টিনন্দন আধুনিক স্থাপত্য নকশায় সমৃদ্ধ। পবিত্র মক্কা নগরীর ঐতিহ্য ধারণ করার কারণে এটি সমগ্র ইসলামী বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
নিজামিয়া মাদ্রাসা
সেলজুক সম্রাজের উজির খাজা নিযামুল মুলক পরে আরো অনেকগুলো নিজোমিয়া মাদ্রাসা চালু করেন। সবগুলো মাদ্রাসাকে একত্রে “নিজোমিয়া” নামে অভিহিত করা হয় যা এর নিজামউদ্দিন মূলক এর নাম থেকে নামকরণ করা হয়েছে।
নিজোমিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান ছিল সমকালীন সর্বোৎকৃষ্ট। মুসলিম বিশ্ব তো বটেই, পুরো ইউরোপজুড়েও ছিল সমাদৃত।
নিজোমিয়া মাদ্রাসা ছিল মধ্যযুগের সেরা ও বিনামূল্যে পাঠদানের জন্য সবচেয়ে বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।
খাজা নিযামুল মুলক ১০৬৫ সালে বাগদাদে নিজোমিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করেন। “নিজোমিয়াগুলোর” মধ্য এটিই সর্বপ্রথম স্থাপিত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই মাদ্রাসাতেই ইমাম গাজ্জালী রহঃ মাত্র ৩৩ বছর বয়সে অধ্যাপনা শুরু করেন।
আজ অবধি আধুনিক বিশ্বের মাদ্রাসা কার্যক্রম “নিজোমিয়া” পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।
উম্মুল বেগ মাদ্রাসা, উজবেকিস্তান
উজবেকিস্তানের সমরকন্দে অবস্থিত উলুম বেগ মাদ্রাসা মধ্যযুগের একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসেবেও এটি সুখ্যাত।
তৈমুরীয় সুলতান উলুগ বেগ ১৪২০ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, ধর্ম, সুফিবাদ, যুক্তিবিদ্যাসহ সকল বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা বিদ্যমান ছিল। ফারসি কবি জামিসহ অনেক পন্ডিত, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী এখানে পড়াশোনা করেছেন। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এর কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপের সমসাময়িক স্থাপত্যকলা ও সংস্কৃতির বিকাশে উলুম বেগ মাদ্রাসার অবদান অনস্বীকার্য।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর
মিসরের কায়রোতে অবস্থিত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।
ফাতেমীয় খলিফা আল মুইজের আদেশে ৯৭২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কুরআন, ফিকহের পাশাপাশি এখানে ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা, চান্দ্রকলা ইত্যাদির পাঠ চলে এবং পরবর্তীকালে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
১০০৫ সালে এখানে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬১-৬২ সময়কালে ইসলামী বিষয়ের পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞানসহ আধুনিক বিষয়সমূহ চালু করা হয়।
বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ টি ইনস্টিটিউট ও ৩৫৯ টি একাডেমিক বিভাগ রয়েছে। বিশ্বসভ্যতায় এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ইসলামী আধুনিক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে সমাদৃত।
আল-মুস্তানসিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইরাক
সভ্যতার উরসর্গ ভূমি ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত আল-মুস্তানসিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আট শতাব্দীর সমৃদ্ধ ইতিহাস ও প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।
আব্বাসীয় খলিফা মুস্তানসির ১২২৭ সালে এটি মাদ্রাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ১২৪২ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপন করা হয় সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার যেখানে চিকিৎসা, গণিত, ইসলামী আইন ও বিজ্ঞানের সকল শাখার অমূল্য সংগ্রহ ছিল। এর সুরম্য স্থাপত্য ও উন্নত সরঞ্জামের তুলনা সমকালীন বিশ্বের কোথাও ছিল না।
এটি বাগদাদকে তৎকালীন এশিয়ার জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। ১৯৬৩ সালে আল-মুস্তানসিরিয়া আধুনিক পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
আল-হাকাম লাইব্রেরি, স্পেন
অষ্টম শতক থেকে মুসলিম শাসিত স্পেন হয়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। কর্ডোভা, সেভিল, মালাগা ও গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র স্পেনে মোট ৭০ টি গ্রন্থাগার ছিল। রাজধানী কর্ডোভায় খলিফা দ্বিতীয় হাকিম (৯৬১-৯৭৬) গড়ে তোলেন বিশাল রাজকীয় গ্রন্থাগার।
এখানে ছিল ছয় লক্ষাধিক গ্রন্থ ও পান্ডুলিপির বিশাল সংগ্রহ। আল-হাকাম লাইব্রেরি তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। ইতিহাসবিদ, পন্ডিত, কপিলেখক ছাড়াও এখানে পাঁচ শতাধিক কর্মচারী কাজ করতেন।
দশম শতাব্দীতে কর্ডোভার আল-হাকাম গ্রন্থাগারকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের সর্বাধিক বইয়ের বাজার গড়ে উঠেছিল।
দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত
ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ শহরে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম মাদ্রাসা উপমহাদেশের ইসলামী শিক্ষার বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ শাসনামলে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও ধর্মীয় শিক্ষার পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে মাওলানা কাসিম নানোতাবির নেতৃত্বে এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিশ্বব্যাপী মৌলিক ইসলামী বিষয়সমূহে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাদৃত।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অসংখ্য মাদ্রাসা দেওবন্দের শিক্ষাপদ্ধতি ও পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ভারতীয় মুসলিম ল-বোর্ডসহ একাধিক সামাজিক সংস্থা এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে পরিচালিত হয়।
উপসংহার
পুরো লেখায় মুসলিম ও বিশ্বসভ্যতা বিকাশে বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপত্য তুলে ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে ইসলামের স্বর্নযুগে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন ইসলামী শিক্ষা,সংস্কৃতি ও জ্ঞান বিকশিত করে তেমনি তা পুরো বিশ্বসভ্যতার বিকাশেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
এবং এর সাথে আধুনিক কালে স্থাপিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও আধুনিক জ্ঞান ও ইসলামের মেলবন্ধনে অবদান রেখে চলছে।
বারবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ
পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি?
মরক্কোর ফেজ শহরে অবস্থিত আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সর্ব-প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।
ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শিক্ষা কেন্দ্র কোনটি?
ইসলাম ও মুসলিম ইতিহাসে সর্বপ্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মক্তব হল “দারুল আরকাম”। ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে মক্কার নিকটবর্তী সাফা পাহাড়ের পাদদেশে আরকাম বিন আবুল আরকামের(রাঃ) বাড়িতে শরিয়াহ শিক্ষার জন্য প্রথম মক্তব চালু হয়, যা মুসলিম ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিকেতন।